ঢাকা ০৫:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমার পিতা আমার অহংকার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৫:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০১৬
  • ২২৬ বার

মোহাম্মদ নাসিম : শহীদ এম মনসুর আলী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মহানায়ক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে চারজন জাতীয় নেতা দেশের মুক্তিযুদ্ধে সফল নেতৃত্ব দেন তাদের অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলী— যিনি আমার গর্বিত পিতা এবং সর্বসময় সর্বমুহূর্তে আদর্শিক নেতা।

যখনই কোনো কাজ করি, চিন্তা করি, আমার চিন্তা-চেতনায় সব সময় পিতার স্পর্শ অনুভব করি। তিনি জীবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন, মরণেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই আছেন। আমার পিতা তার পরিবারের বাইরে প্রতিটি মুহূর্ত বঙ্গবন্ধুর কথা ভাবতেন, বঙ্গবন্ধুর কথা বলতেন। বঙ্গবন্ধু ছাড়া যেন তার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। মাঝে মধ্যে আমার মনে হতো তিনি যেন আমাদের চাইতে বঙ্গবন্ধুকে বেশি ভালোবাসেন। তিনি যখন রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছেন সেই মুহূর্ত থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ছাড়া তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোনো কিছুই করার চিন্তা করতেন না।

তার সন্তান হিসেবে আমি দেখেছি ছয় দফার আন্দোলনে যখন বঙ্গবন্ধুর অনেক সহকর্মী তাকে ত্যাগ করে চলে গেছেন, কারাবন্দী অবস্থা থেকেও আমার পিতা মনসুর আলী শত প্রলোভন ও চাপের মুখেও তখনকার পিডিএমপন্থি আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান, সালাম খানদের সঙ্গে যোগদান করেননি। দীর্ঘ কারাজীবন ভোগ করেছেন, কিন্তু নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে বেইমানি করেননি। আমার পিতার দৃঢ় অভিব্যক্তি ও মনোভাব দেখেছি, ১৯৬৬-৬৭ সালে যখন এম মনসুর আলী পাবনা কারাগারে বন্দী, আমিও ছাত্রাবস্থায় পিতার সঙ্গে একই কারাগারে আটক ছিলাম।

দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রাম শেষে যখন একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানে কারাবন্দী তখন আমার পিতাসহ জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে মুজিবনগর সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের সফল নেতৃত্ব দেন। সেই দুঃসাহসিক ও গৌরবময় মুহূর্তগুলো দেখার বা জানার সুযোগ হয়েছে। আমি দেখেছি সেই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে শহীদ এম মনসুর আলী কী দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনতে

এবং জীবিত বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার জন্য অন্য তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করে গেছেন।

খন্দকার মোশতাকের মতো সুযোগ সন্ধানী কিছু বিশ্বাসঘাতক প্রতিমুহূর্তে চেষ্টা করেছে এই চারজনের মধ্যে ফাটল ধরাতে এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করার নানারকম প্রলোভনের জাল বিস্তার করে মুজিবনগর নেতৃত্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য। কিন্তু একটি বিপদগ্রস্ত এবং জাতির যুগসন্ধিক্ষণে শহীদ এম মনসুর আলী অন্য তিন নেতার সঙ্গে থেকে সব ভয়-ভীতি, অনিশ্চয়তা এবং প্রলোভন উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধকে সফল করেছেন। সফেদ পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে আমার পিতা মনসুর আলী এই কমাস অনন্য সাধারণ জীবনযাপনের মধ্যদিয়ে মুজিবনগরের রণাঙ্গনে ছুটে বেড়িয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকে তাদেরকে সাহস যুগিয়েছেন।

প্রবাসী সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শত শত দলীয় সহকর্মী, দেশ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার কর্মীকে আর্থিক সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন। আমি দেখেছি হাজার অনিশ্চয়তা ও অমানিশার মধ্যেও সাধারণ বাঙালির চেয়ে দীর্ঘদেহী আমার পিতার উজ্জ্বল প্রত্যয়দীপ্ত মুখচ্ছবি। তিনি সর্বদা বলতেন, বাঙালির বিজয় অবশ্যম্ভাবী। জীবিত বঙ্গবন্ধুকে আমরা ইনশাল্লাহ মুক্ত করব। আসলে জাতীয় চার নেতার নেতৃত্বে মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের যে সফল নেতৃত্ব তা নিয়ে একটি মহাকাব্য রচনা করা যেতে পারে। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের অবকাঠামো গড়ে তোলা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বন্দর পুনরায় চালু করা, স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতত্পরতা এবং হঠকারী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী নামধারীদের রোধ করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করা ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জ।

তিনি দক্ষতার সঙ্গে সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছেন। পিতাকে চিরতরে হারানোর আগে মাত্র কয়েক ঘণ্টা তার সঙ্গে আমি ছিলাম। ১৫ আগস্টের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সে সময় তাকে দেখেছি কী উদ্বেগ ও প্রচণ্ড বেদনা নিয়ে একদিকে বঙ্গবন্ধুকে হারানোর কষ্ট সইছেন, অন্যদিকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার অদম্য ইচ্ছে নিয়ে দলীয় সহকর্মী এবং তদানীন্তন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। শহীদ এম মনসুর আলী আত্মগোপন অবস্থায়ও চেষ্টা করেছেন নানাভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু কিছু সহকর্মীর ভীরুতা, আপসকামিতা ও জীবন রক্ষার প্রাণান্ত চেষ্টা, অন্যদিকে তখনকার সামরিক-বেসামরিক নেতৃত্বের চরম ব্যর্থতা, চরম কাপুরুষতার কারণে তিনি ব্যর্থ ও হতাশ হয়েছিলেন।

কিছু করতে না পারার বেদনায় জর্জর তার অশ্রুসিক্ত চেহারা আমি দেখেছিলাম। কিন্তু একই সঙ্গে তার ছিল দৃঢ় প্রত্যয় তিনি জীবন দেবেন তবু অন্য অনেকের মতো খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলাবেন না। তাই তিনি মাথা উঁচু করে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বিশ্বাসঘাতক মোশতাকের মুখের ওপর বলেছিলেন, তোমার মতো বেইমানের সঙ্গে আমি হাত মেলাব না। জীবন দেব, প্রধানমন্ত্রী হব না। তিনি তার কথা রেখেছিলেন। শহীদ এম মনসুর আলী আপস করেননি, আত্মসমর্পণ করেননি, মাথানত করেননি, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী এম মনসুর আলী ঘাতকের হাতে জীবন দিয়েছেন।

১৫ আগস্টের পরে বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেক বিশ্বাসঘাতক-কাপুরুষের জন্ম হলেও চারজন মৃত্যুঞ্জয়ী নেতার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চিরদিন। যারা জীবন দিয়েছেন, জাতির জনকের সঙ্গে বেইমানি করেননি তাদের মধ্যে একজন আমার পিতা শহীদ এম মনুসর আলী—এ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমার পিতা শহীদ এম মনসুর আলী। তাকে হারানোর চেয়ে বড় বেদনা, বড় কষ্ট আমার জীবনে আর কিছু নেই।

কিন্তু আমার জীবনে সবচেয়ে বড় গর্ব ও অহংকার হলো আমি খন্দকার মোশতাকের মতো কোনো বেইমানের সন্তান নই, শহীদ এম মনসুর আলীর মতো একজন সাহসী মৃত্যুঞ্জয়ী সত্যনিষ্ঠ, নীতিনিষ্ঠ পিতার সন্তান। নেতা বা নেতার আদর্শের সঙ্গে বেইমানি নয়, বিশ্বাসঘাতকতা নয়, কোনো আপসকামিতা নয়, আমার শহীদ পিতার এই আদর্শ ধরেই আমি কাজ করছি, কাজ করে যাব, এই অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে ৩ নভেম্বরে শহীদ পিতার প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদন।

লেখক : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আমার পিতা আমার অহংকার

আপডেট টাইম : ১১:২৫:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০১৬

মোহাম্মদ নাসিম : শহীদ এম মনসুর আলী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মহানায়ক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে চারজন জাতীয় নেতা দেশের মুক্তিযুদ্ধে সফল নেতৃত্ব দেন তাদের অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলী— যিনি আমার গর্বিত পিতা এবং সর্বসময় সর্বমুহূর্তে আদর্শিক নেতা।

যখনই কোনো কাজ করি, চিন্তা করি, আমার চিন্তা-চেতনায় সব সময় পিতার স্পর্শ অনুভব করি। তিনি জীবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন, মরণেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই আছেন। আমার পিতা তার পরিবারের বাইরে প্রতিটি মুহূর্ত বঙ্গবন্ধুর কথা ভাবতেন, বঙ্গবন্ধুর কথা বলতেন। বঙ্গবন্ধু ছাড়া যেন তার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। মাঝে মধ্যে আমার মনে হতো তিনি যেন আমাদের চাইতে বঙ্গবন্ধুকে বেশি ভালোবাসেন। তিনি যখন রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছেন সেই মুহূর্ত থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ছাড়া তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোনো কিছুই করার চিন্তা করতেন না।

তার সন্তান হিসেবে আমি দেখেছি ছয় দফার আন্দোলনে যখন বঙ্গবন্ধুর অনেক সহকর্মী তাকে ত্যাগ করে চলে গেছেন, কারাবন্দী অবস্থা থেকেও আমার পিতা মনসুর আলী শত প্রলোভন ও চাপের মুখেও তখনকার পিডিএমপন্থি আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান, সালাম খানদের সঙ্গে যোগদান করেননি। দীর্ঘ কারাজীবন ভোগ করেছেন, কিন্তু নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে বেইমানি করেননি। আমার পিতার দৃঢ় অভিব্যক্তি ও মনোভাব দেখেছি, ১৯৬৬-৬৭ সালে যখন এম মনসুর আলী পাবনা কারাগারে বন্দী, আমিও ছাত্রাবস্থায় পিতার সঙ্গে একই কারাগারে আটক ছিলাম।

দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রাম শেষে যখন একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানে কারাবন্দী তখন আমার পিতাসহ জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে মুজিবনগর সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের সফল নেতৃত্ব দেন। সেই দুঃসাহসিক ও গৌরবময় মুহূর্তগুলো দেখার বা জানার সুযোগ হয়েছে। আমি দেখেছি সেই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে শহীদ এম মনসুর আলী কী দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনতে

এবং জীবিত বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার জন্য অন্য তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করে গেছেন।

খন্দকার মোশতাকের মতো সুযোগ সন্ধানী কিছু বিশ্বাসঘাতক প্রতিমুহূর্তে চেষ্টা করেছে এই চারজনের মধ্যে ফাটল ধরাতে এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করার নানারকম প্রলোভনের জাল বিস্তার করে মুজিবনগর নেতৃত্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য। কিন্তু একটি বিপদগ্রস্ত এবং জাতির যুগসন্ধিক্ষণে শহীদ এম মনসুর আলী অন্য তিন নেতার সঙ্গে থেকে সব ভয়-ভীতি, অনিশ্চয়তা এবং প্রলোভন উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধকে সফল করেছেন। সফেদ পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে আমার পিতা মনসুর আলী এই কমাস অনন্য সাধারণ জীবনযাপনের মধ্যদিয়ে মুজিবনগরের রণাঙ্গনে ছুটে বেড়িয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকে তাদেরকে সাহস যুগিয়েছেন।

প্রবাসী সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শত শত দলীয় সহকর্মী, দেশ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার কর্মীকে আর্থিক সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন। আমি দেখেছি হাজার অনিশ্চয়তা ও অমানিশার মধ্যেও সাধারণ বাঙালির চেয়ে দীর্ঘদেহী আমার পিতার উজ্জ্বল প্রত্যয়দীপ্ত মুখচ্ছবি। তিনি সর্বদা বলতেন, বাঙালির বিজয় অবশ্যম্ভাবী। জীবিত বঙ্গবন্ধুকে আমরা ইনশাল্লাহ মুক্ত করব। আসলে জাতীয় চার নেতার নেতৃত্বে মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের যে সফল নেতৃত্ব তা নিয়ে একটি মহাকাব্য রচনা করা যেতে পারে। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের অবকাঠামো গড়ে তোলা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বন্দর পুনরায় চালু করা, স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতত্পরতা এবং হঠকারী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী নামধারীদের রোধ করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করা ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জ।

তিনি দক্ষতার সঙ্গে সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছেন। পিতাকে চিরতরে হারানোর আগে মাত্র কয়েক ঘণ্টা তার সঙ্গে আমি ছিলাম। ১৫ আগস্টের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সে সময় তাকে দেখেছি কী উদ্বেগ ও প্রচণ্ড বেদনা নিয়ে একদিকে বঙ্গবন্ধুকে হারানোর কষ্ট সইছেন, অন্যদিকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার অদম্য ইচ্ছে নিয়ে দলীয় সহকর্মী এবং তদানীন্তন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। শহীদ এম মনসুর আলী আত্মগোপন অবস্থায়ও চেষ্টা করেছেন নানাভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু কিছু সহকর্মীর ভীরুতা, আপসকামিতা ও জীবন রক্ষার প্রাণান্ত চেষ্টা, অন্যদিকে তখনকার সামরিক-বেসামরিক নেতৃত্বের চরম ব্যর্থতা, চরম কাপুরুষতার কারণে তিনি ব্যর্থ ও হতাশ হয়েছিলেন।

কিছু করতে না পারার বেদনায় জর্জর তার অশ্রুসিক্ত চেহারা আমি দেখেছিলাম। কিন্তু একই সঙ্গে তার ছিল দৃঢ় প্রত্যয় তিনি জীবন দেবেন তবু অন্য অনেকের মতো খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলাবেন না। তাই তিনি মাথা উঁচু করে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বিশ্বাসঘাতক মোশতাকের মুখের ওপর বলেছিলেন, তোমার মতো বেইমানের সঙ্গে আমি হাত মেলাব না। জীবন দেব, প্রধানমন্ত্রী হব না। তিনি তার কথা রেখেছিলেন। শহীদ এম মনসুর আলী আপস করেননি, আত্মসমর্পণ করেননি, মাথানত করেননি, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী এম মনসুর আলী ঘাতকের হাতে জীবন দিয়েছেন।

১৫ আগস্টের পরে বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেক বিশ্বাসঘাতক-কাপুরুষের জন্ম হলেও চারজন মৃত্যুঞ্জয়ী নেতার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চিরদিন। যারা জীবন দিয়েছেন, জাতির জনকের সঙ্গে বেইমানি করেননি তাদের মধ্যে একজন আমার পিতা শহীদ এম মনুসর আলী—এ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমার পিতা শহীদ এম মনসুর আলী। তাকে হারানোর চেয়ে বড় বেদনা, বড় কষ্ট আমার জীবনে আর কিছু নেই।

কিন্তু আমার জীবনে সবচেয়ে বড় গর্ব ও অহংকার হলো আমি খন্দকার মোশতাকের মতো কোনো বেইমানের সন্তান নই, শহীদ এম মনসুর আলীর মতো একজন সাহসী মৃত্যুঞ্জয়ী সত্যনিষ্ঠ, নীতিনিষ্ঠ পিতার সন্তান। নেতা বা নেতার আদর্শের সঙ্গে বেইমানি নয়, বিশ্বাসঘাতকতা নয়, কোনো আপসকামিতা নয়, আমার শহীদ পিতার এই আদর্শ ধরেই আমি কাজ করছি, কাজ করে যাব, এই অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে ৩ নভেম্বরে শহীদ পিতার প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদন।

লেখক : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য